হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় এডিএসআরএমটিপি প্রকল্পের আওতায় মিশ্র ফসল বিভিন্ন শাক-সবজি চাষ করে অপেক্ষাকৃত লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা। শানখলা ইউনিয়নের লালচান্দ, রমাপুর, কালি নগর, তোতার টিপি সহ কয়েকটি এলাকার ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, চিচিঙ্গা, লাউ, কুমড়া সহ বিভিন্ন জাতের বেগুনের খেত।
৫নং শানখলা ইউনিয়নের রমাপুর গ্রামের কৃষক মো. আইয়ুব আলী জানান, উপজেলা কৃষি অফিস হতে তাকে ১ বিঘা জমিতে মিশ্র ফসল প্রদর্শনী দেওয়া হয়। এই জমিতে তিনি বেগুন, মিষ্টিকুমড়া, চিচিঙ্গা এবং লালশাক আবাদ করেছেন। তিনি ইতোমধ্যে ৭০ হাজার টাকার বেগুন, লালশাক, মিষ্টিকুমড়া ও চিচিঙ্গা বিক্রি করেছেন আরও ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
জোয়ারলালচান্দ গ্রামের কৃষক মো. আলফু মিয়া ১ বিঘা জমিতে মিশ্র ফসল হিসাবে লালশাক, কলমিশাক, পুঁইশাক ও বেগুন চাষ করেছিলেন। তিনি ইতোমধ্যে ৪০ হাজার টাকার ফসল বিক্রি করেছেন।
একই গ্রামের কৃষক ফজল ইসলাম মিশ্র ফসল হিসাবে বেগুন, বরবটি, লালশাক ও পুঁইশাক আবাদ করেছিলেন। তিনি ৩৭ হাজার টাকার ফসল বিক্রি করেছেন আরো ২০ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। পাশাপাশি জমিতে মিশ্র ফসল প্রদর্শনী পেয়েছিলেন কৃষক তাজুল ইসলাম। তিনি লাউ ও লালশাক একসাথে আবাদ করেছেন । ইতোমধ্যে ৩৫ হাজার টাকার ফসল বিক্রি করেছেন।
মিশ্র ফসল প্রদর্শনীর আরেক কৃষক শরীফুল হাসান শামীম লাউ ও লালশাক আবাদ করে ৩০ হাজার টাকার ফসল বিক্রি করেন। "আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় শানখলা ইউনিয়নের জোয়ারলালচান্দ গ্রামে ক্লাস্টার হিসেবে পাশাপাশি ৫ বিঘা জমিতে মিশ্র ফসল চাষ প্রদর্শনী দেওয়া হয়। কৃষি বিভাগ হতে বীজ, রাসায়নিক সার, জৈব সার, বালাইনাশক প্রদান করেন এবং কারিগরি সহায়তা প্রদান করা হয় । এই প্রদর্শনীগুলো থেকে কৃষক ২ লাখ ২৮ হাজার টাকার ফসল বিক্রি করেন। কৃষক আইয়ুব আলী বলেন, বাজারে বিভিন্ন সবজির চাহিদা বেশি থাকে। একই জমিতে একাধিক ফসল আবাদ করে অপেক্ষাকৃত বেশি লাভবান হয়েছি। কৃষি বিভাগের সর্বাত্মক সহযোগিতায় আমরা কৃষি জমি আবাদ করে লাভবান হয়েছি ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাহিদুল ইসলাম বলেন, "আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প" হচ্ছে সিলেট অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন এর জন্য একটি যুগান্তকারী প্রকল্প। এই প্রকল্প এর মাধ্যমে শানখলা ইউনিয়নে মিশ্র ফসল প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে। এ প্রদর্শনীতে একই জমিতে একাধিক ফসল আবাদ করা হয়, ফলে একদিকে যেমন জমির সদ্ব্যবহার করা সম্ভব হয়, অন্যদিকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যা-খড়া ইত্যাদিতে একটি ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হলেও অন্য ফসল দিয়ে লাভবান হওয়া সম্ভব। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যেমন দক্ষ করে তোলা হচ্ছে তেমনি এলএলপি, ফিতা পাইপ বিভিন্ন কৃষক দলের মধ্যে প্রদান করে সেচ সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে সাময়িক পতিত জমিকে ফসলের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে। অন্যদিকে বিভিন্ন উচ্চমূল্যের ফসল, বাণিজ্যিক ফল বাগান যেমন- জি-৯ কলা, বলসুন্দরী, ড্রাগন, নাবি জাতের আম, চায়না-৩ লিচু, মিশ্র ফল বাগান স্থাপন, যেসকল ফসলে সেচ কম লাগে- সরিষা, ভূট্টা, গম, সূর্যমুখী, বিভিন্ন সবজি ইত্যাদির আবাদ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। শানখলা ইউনিয়নে কৃষকরা পতিত জমিতে আবাদ করে লাভবান তারা । অপরদিকে পতিত জমির পরিমাণ দ্রুত কমে আসছে।